বিদেশে ডিগ্রী নিতে চাইলে কি কি করতে হয় এবং যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা দরকার

অনেকদিন ধরেই এই কথাগুলো বলব ভাবছিলাম কিন্তু ব্যস্ততার কারণে বলা হয়ে উঠেনি। তবে খুব তাগিদ অনুভব করছিলাম কথাগুলো বলার জন্য। তবে শুরুতেই বলে নিচ্ছি, এই কথাগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে বলা। কেউ কেউ এর ব্যতিক্রম যুক্তি অবশ্যই দিতে পারে, সেটা সাদরে গ্রহণযোগ্য।
কোরিয়া আসার পর প্রায়ই জুনিয়র ভাই-বোনদের কাছ থেকে কিছু প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় আমাকে (শুধু আমিই না, যারা বিদেশে পড়তে গিয়েছে তাদের সবারই একই অবস্থা)। প্রশ্নগুলো হলোঃ 
- আমি বিদেশে ডিগ্রি নিতে চাই, এরজন্য আমাকে কি করতে হবে?
- বিবিএ শেষ করেই এমবিএ করতে যেতে চাই, কোন দেশে গেলে ভালো হবে?
- বিদেশে যেতে হলে এখন থেকেই কি কি প্রস্তুতি নেয়া দরকার? ইত্যাদি….. ইত্যাদি।
সত্যি কথা বলতে আমি আসলে কাউকে এখন পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি এবং তাদেরকে সন্তুষ্টও করতে পারিনি। কারণ, আমি সত্যিই এসব কিছু জানিনা। আমার কোরিয়ায় পড়তে আসার ব্যকগ্রাউন্ডটা একটু অন্য ধরণের ছিল তাই আমি এসব ব্যাপারে কিছুই জানিনা, বলতেও পারি না। তবে, এ ব্যাপারে আমার কিছু অভিমত আছে সেগুলো একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি।
১. বর্তমানে আমাদের দেশে বিদেশি ডিগ্রি নেয়ার মানসিকতাটা কারো কারো জন্য প্রতিযোগীতামূলক হয়ে উঠেছে বলে আমার মনে হয়েছে। অমুকে বিদেশে পড়তে গিয়েছে তাই আমাকেও যেতে হবে। আমার পরামর্শ হলো, এভাবে চিন্তা না করে আমাদের নিজের Hidden Potential টা বের করার চেষ্টা করা উচিত, জীবনে কি করতে চাই সেটা আগে ঠিক করা প্রয়োজন, সেটা করতে যদি একান্তই বিদেশি ডিগ্রি প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই করা, অন্যথায় কেন?
২. অনেকেই হয়তো চিন্তা করছো, বিবিএ/এমবিএ করেই বিদেশ চলে যাবো, বাইরে থেকে এমবিএ করে হয় ওখানেই সেটেল হয়ে যাবো নয়তো দেশে ফিরে ভাল পজিশনে চাকরি নিয়ে নিবো। এই বিষয়ে আমার মনে হয়, বিষয়টা এত সহজ নয়। বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঢাবি থেকে এমবিএ শেষ করলেই অনেক প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউতেই ডাকে না, ওভারকোয়ালিফাইড মনে করে। আবার কেউ যদি বিবিএ পাশ করেই বিদেশি এমবিএ নিয়ে আসে তাহলেই যে তাকে মিড-লেভেলের পজিশনে চাকরি দিবে তা কিন্তু নয়, কারণ তখনও সে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট। স্বভাবতই, সেই ডিগ্রিধারী বিদেশি ডিগ্রির কারণে নিজেকে এন্ট্রি-লেভেলে জয়েন করতে চায় না, আবার মিড-লেভেলেও পায় না। তখনই জীবনে হতাশা নেমে আসে। এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, বিবিএ/এমবিএ পাশ করে আগে পছন্দমত ক্যারিয়ারে কিছুদিন সেটেল হয়ে, বিদেশে ডিগ্রি নিতে যাওয়াটাই শ্রেয়। তাতে সেই প্রতিষ্ঠানের (সরকারি/বেসরকারি) সাথে মিউচুয়াল এগ্রিমেন্টও করে নেয়া যায় যে আমি ফিরে এসে এই প্রতিষ্ঠানেই জয়েন করবো, তাতে অবশ্যই একটু উপরের লেভেলে চলে যাওয়া সম্ভব।
৩. এবার আসি বয়সের ব্যাপারে, বিবিএ/এমবিএ (২৪/২৫ বছর বয়সে) করার পরপরই যদি কেউ বিদেশি ডিগ্রি নিতে যায় এবং আরো ০২ বছর মাস্টার্স, ০৩ বছর পিএইচডি করে আসে তাহলেই প্রায় ৩০ বছরের কোঠায় চলে আসে। পিএইচডি বাদই দিলাম, ০২ বছর মাস্টার্স করে আসার পরেও যে সময় থাকে সেটা ভালো/পছন্দসই কোন জব পেতে কষ্টসাধ্য বিষয়। চাকরির আবেদন করা, পরীক্ষার জন্য আবার নতুন করে সেইসব পড়াশুনা করা, লিখিত পার করা, ভাইভা পার করা সব মিলিয়ে বেশ ভালই সময় লেগে যায়। আর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেতো সময়টা আরো দীর্ঘমেয়াদি। আবার ঐ বয়সে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিতে চাইবে না। এক্ষেত্রেও পূর্বের পরামর্শটা (২ নং এ বলা) কাজে লাগানো যেতে পারে। 
৪. যে সেটেল হতে চায় অথবা দেশে ফিরে আসতে চায় দুই ধরনের চিন্তার ক্ষেত্রেই আমি এই একই পরামর্শ দিতে চাই। কারণ, বর্তমানে যেকোন দেশেই সেটেল হওয়াটা অনেক কঠিন। তাই দেশে যদি কোন প্রতিষ্ঠানে (সরকারি/বেসরকারি) কিছুদিন চাকরি করে যদি তাদের সাথে মিউচুয়াল এগ্রিমেন্ট এর মাধ্যমে ডিগ্রি নিতে যাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সেটেল হয়ে যেতে পারলেতো হয়েই গেল। আর না পারলেও ফিরে এসে আবার সেই চাকরিতেই বরং একটু উপরের পজিশনে Continue করা যাবে। এতে করে হারানোর কিছু থাকলো না। (আমার দেখা মতে, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এই ধরনের সুযোগ দিয়ে থাকে এবং অনেকেই এই সুযোগ নিয়ে অনেক ভালো পজিশনে আছেনও)।
৫. তবে কারো যদি শিক্ষকতা পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে উপরের যুক্তিগুলো অনেকাংশেই প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৩০ বছর বয়সের সীমারেখাটা বিবেচনার বিষয় হতে পারে।
অনেক বড় লেখার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত…..
©Asim Kumar Sarker,
BBA, MBA, University of Dhaka.
Handong Ambassador of Bangladesh,
Handong Global University.

Comments

Popular posts from this blog

CGPA, CREDIT & WGPA গণনা পদ্ধতি

আন যুক্ত ঢাবিয়ান নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরামর্শ। MasterPiece University Admission Coaching